স্টাফ রিপোর্টার
দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ উপজেলার শিবপুর মাদ্রাসার মোড় এলাকায় ব্রিজ নির্মাণকাজে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় টানা বর্ষণে সৃষ্টি হয়েছে ভয়াবহ জলাবদ্ধতা। এতে একদিকে যেমন বিশাল আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন মৎস্যচাষি মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান, তেমনি বিপাকে পড়েছেন এলাকার বহু ধানচাষিও। প্লাবিত হয়ে গেছে পুকুর ও জমি—ভেসে গেছে মাছ, তলিয়ে গেছে পাকা ধান। একদিনের বৃষ্টিতেই ক্ষতি ছুঁয়েছে প্রায় কোটি টাকার।
মৎস্যচাষি মো. হাবিবুর রহমান জানান, তিনি কুশদহ ইসলামপুর মৌজার চুনাডুবি নিলে দীর্ঘদিন ধরে মৎস্যচাষ করে আসছিলেন। নিজস্ব ও লিজ নেয়া মোট ৮টি পুকুরে মাছ চাষ করছিলেন। কিন্তু ব্রিজ নির্মাণের জন্য পাশের সড়কে তৈরি বাইপাসের নিচে পানি চলাচলের কোনো ব্যবস্থা না থাকায়, অতিবৃষ্টিতে সব পুকুর একসাথে প্লাবিত হয়ে মাছ ভেসে যায়। ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৩৫ লক্ষ টাকা।
তিনি বলেন, “এত বছর ধরে নিজের পায়ে দাঁড়াতে চেষ্টা করেছি। এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে পুকুর করেছি। এখন আমি নিঃস্ব। সব শেষ হয়ে গেল।”
এখানেই শেষ নয়। শুধু হাবিবুর নন, এই জলাবদ্ধতায় ক্ষতির মুখে পড়েছেন এলাকার অনেক ধানচাষি। কৃষক মো. রহিম উদ্দিন বলেন, “আমার ৩ একর জমির ধান কাটা শুরু করেছিলাম, হঠাৎ পানি উঠে সব তলিয়ে দিলো। এখন এক মুঠো ধানও ঘরে তুলতে পারিনি।”
স্থানীয় কৃষক আব্দুল করিম, রওশন আলী ও নাজমুল হক জানান, তাদেরও কয়েক একর জমির ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। “আমরা অনেকেই ধারদেনা করে চাষ করেছিলাম। এখন কিভাবে চালাবো সংসার?”—প্রশ্ন তাদের।
ক্ষতিগ্রস্ত মৎস্যচাষি হাবিবুর রহমান ইতোমধ্যে নবাবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আশরাফুল হকের কাছে লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছেন। ইউএনও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা বলেন, “ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক। আমরা বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখছি। ক্ষতিগ্রস্ত চাষিকে সহযোগিতা দিতে ঊর্ধ্বতন দপ্তরে রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে।”
স্থানীয় বাসিন্দা মোছাঃ আসমা বেগম বলেন, “যখন উন্নয়ন হয়, তখন সাধারণ মানুষের ক্ষতির কথা কেউ ভাবে না। আগে থেকে পানি চলাচলের ব্যবস্থা করলে এত বড় ক্ষতি হতো না।”
এলাকাবাসীর অভিযোগ, ব্রিজ নির্মাণের আগে পরিবেশগত প্রভাব বিশ্লেষণ না করায় এমন দুর্যোগের সৃষ্টি হয়েছে। তারা দ্রুত ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ ও ভবিষ্যতে এমন ভুল না করার আহ্বান জানান।
এই ঘটনা শুধু একজন মৎস্যচাষির স্বপ্ন ভেঙে দেয়নি, বরং গোটা অঞ্চলের কৃষি ও জীবিকার ওপর নেমে এসেছে চরম দুর্যোগের ছায়া।
0 মন্তব্যসমূহ